মাগুরার আলোচিত শিশু ধর্ষণ ও হত্যা মামলার প্রধান আসামি হিটু শেখের মৃত্যুদণ্ড ও এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড দিয়েছে আদালত। এছাড়া এই মামলার অপর তিন আসামিকে খালাস দেয়া হয়েছে।
শনিবার (১৭ মে) সকালে মাগুরার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক এম জাহিদ হাসান এ রায় ঘোষণা করেন।
রায় ঘোষণার সময় আসামিরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
মামলার বাদি শিশুটির মা রায় ঘোষণার পর বলেন, ‘আমরা এ রায়ে সন্তুষ্ট না।’ হিটু শেখের মৃত্যুদণ্ড হলেও বাকি তিন আসামির খালাস পাওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন তিনি।
একইসাথে রায়ের কপি উত্তোলন করে উচ্চ আদালতে খালাস পাওয়া আসামিদের বিচার দাবি করে আপিল করবেন বলেও জানান।
আদালত চত্বরে রায় শুনতে আসা উৎসুক জনতাও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, বাকি তিন আসামিও কোনো না কোনোভাবে এ ঘটনার সাথে জড়িত। তাই তাদের শাস্তি হওয়া উচিত ছিল। একইসাথে তারা প্রধান আসামি হিটু শেখের মৃত্যুদণ্ড দ্রুত কার্যকর করার দাবি করছেন।
আসামিপক্ষের আইনজীবী সোহেল আহমেদ বলেন, ‘এ রায়ের বিরুদ্ধে আমরা উচ্চ আদালতে যাব। তবে আসামিপক্ষ থেকে যদি আমার সাথে যোগাযোগ করে তাহলে আমি সহায়তা করব। আর যদি কোনো যোগাযোগ না করে তাহলে এ মামলার ব্যাপারে আমার আর কোনো ইন্টারেস্ট নেই। যতটুকু দায়িত্ব ছিল, সে অনুযায়ী চেষ্টা করেছি।’
রাষ্ট্রপক্ষে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিযুক্ত অ্যার্টনি জেনারেল পদ মর্যাদার আইন কর্মকর্তা এহসানুল হক সমাজী বলেন, যুগান্তকারী রায়ের মাধ্যমে এই মাগুরার নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইবুন্যাল দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির মাধ্যমে এক অনন্য রায় ঘোষণা হয়েছে। আর সে রায়টি হচ্ছে, দেশব্যাপী ও বহির্বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টিকারী শিশু হত্যা মামলা।
মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার জারিয়া গ্রামের আট বছর বয়সী শিশুটি গত ১ মার্চ সদর উপজেলার শহরতলীর নিজনান্দুয়ালী গ্রামে বড় বোনের বাড়িতে বেড়াতে যায়। সেখানে ৬ মার্চ ধর্ষণের শিকার হয় শিশুটি। প্রথমে তাকে মাগুরা হাসপাতালে ভর্তি করা হলে অবস্থার অবনতি হলে ফরিদপুর ও পরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়। সর্বশেষ চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৩ মার্চ ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) তার মৃত্যু হয়।
এ ঘটনায় শিশুটির মা ৮ মার্চ মাগুরা সদর থানায় শিশুটির বোনের শ্বশুর হিটু শেখ, জামাই সজিব শেখ, তার ভাই রাতুল শেখ ও তাদের মা জাহেদা খাতুনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন।
পুলিশ ঘটনার পর ৪ আসামিকেই গ্রেফতার করে। এ মামলায় ১৩ এপ্রিল মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আলাউদ্দিন আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করেন। অভিযোগ গ্রহণের পর ১৩ কার্য দিবসে ২৯ সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আজ শনিবার রায় ঘোষণা করেন মাগুরা নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইবুন্যালের বিচারক এম জাহিদ হাসান।
Leave a Reply